বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা ভারতীয় সিনেমা গুন্ডে নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম কয়েকদিন আগেই কিন্তু সমস্যা হল পিসি অন করে লেখার প্লান করি যা লেখি অন্য একটা বিষয় নিয়ে। গুন্ডে নিয়ে আমার বন্ধু লিস্টের মোটামুটি অনেকের পোস্ট পড়েছি, কিন্তু সবাই ভারতের নিন্দা করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন সমস্বরে।যে প্রশ্নটা করার কথা ছিল সেই প্রশ্নটা অনেকেই করেণনি। ইতিহাস বিকৃতি নির্ভর মুভির ক্ষেত্রে জনগণ সমালোচনা করবে, প্রতিবাদ করবে স্বাভাবিক, কিন্তু রাস্ট্র থেকে সরকারীভাবে যদি প্রতিবাদ না জানানো হয় তাহলে জনগণের প্রতিবাদের কোনো মূল্য থাকে না ঐ দেশের সরকারের কাছে । যাইহোক, দেরীতে হলেও আমাদের সরকার প্রতিবাদ জানিয়েছে। এজন্য আমাদের সরকার ধন্যবাদ প্রাপ্য। একাজটা মুভি রিলিজ হওয়ার আগেই করা উচিৎ ছিল যাতে সেটা মুক্তি না পায়। অবশ্য এজন্য দরকার জাতীয়তাবাদী ও দেশ প্রেমিক সরকার! জনগণের প্রতিবাদের আগেই সরকার পক্ষ প্রতিবাদের কাজটা করে।
ভারত যে কারণেই আমাদের সহযোগিতা করুক আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আছে আমরা কেউ অস্বীকার করব না, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু তাই বলে দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আমরা বিকৃতি বা অবমূল্যায়ন করতে দিতে পারি না । এটা ঠিক ভারতীয়রা তাদের বীরত্ব দেখবে বা দেখাবে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসেরও যাতে প্রতিচ্ছবি ও প্রতিধ্বনিত হয় সেটাও থাকতে হবে।
একজনের লিখেছেন এরকম-জনতা নাকি প্রতিবাদ করে লাভ নেই ! আমাদের দেশের শিল্পীদের নাকি বলিউডে শক্ত অবস্থান করে নিলেই নাকি সেই তারকাদের প্রতিবাদ যুগান্তরী হবে ! প্রশ্ন হলো যারা বলিউডের নুন খাবে, যে ভারতের অন্নে, অর্থে যে তারকা পরিপুষ্ট, যেখানে যার জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন সেখানে তিনি প্রতিবাদ করবেন কোন সাহসে ? আর কোনো দেশের ঐতিহাসিক ও স্পর্শকাতর কোনো ঘটনা নিয়ে ইচ্ছে করলেই বিশ্বের যে কোনো দেশই তা নিয়ে মুভি বানাতে পারে । সেক্ষত্রে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র শিল্পীগণ কয়টি দেশের মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করবেন ? অন্যদেশের মুভি ইন্ডাস্টির দিকে না তাকিয়ে নিজ দেশের সিনেমা শিল্প কিভাবে ভাল করা যায় সেদিকে মনোযোগ দেওয়াই কি উত্তম নয় ?
ঐতিহাসিক ঘটনাকে বিকৃতি করে একটি দেশ মুভি তখণই বানায় যখন সেই দেশের সাথে তাদের শত্রুতার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে, কিন্তু ভারতের জনগণের সাথে দূরে থাক এমনকি ভারতের সরকারের সাথে আমাদের সরকারের কোনো শত্রুতার সম্পর্কও নেই ! তারপরেও ভারত কর্তৃক গুন্ডের মত মুভি বানানো আমাদের জন্য সতিই বিব্রতকর ও অসম্মানজনক। সিরিয়ার সাথে সৌদির বর্তমানে সাপে নেউলে সম্পর্ক। সিরিয়ান পরিচালক সৌদি রাজতন্ত্রকে দস্যু, লুটেরা, খুনি হিসাবে উপস্থাপন করে মুভি বানিয়েছে বালির বাদশাহ ! এরকম আর একটি মুভি হলো আর্গো। ইরানের সাথে আমেরিকার সাপে নেউলে সম্পর্ক। গত বছরের অস্কার পাওয়া মুভি ছিল আর্গো। এই মুভিটি নির্মাণ করেছিল হলিউড। ইরানের ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের মার্কিন দুতাবাস জিম্মি ঘটনাকে প্রেক্ষাপট করে। সেখানে ইরানিদের নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেই মুভির পরিচালক ও কলাকুশলিদের হাতে পুরষ্কার তুলে দিয়েছেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা । এজন্য মিশেল ওবামাকে ইরানের জাতীয় দৈনিকগুলো কম ব্যাঙ্গ করেনি ! ইরান সরকার দ্রুত সেই মুভির প্রতিবাদ জানায় এবং ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালক এর পাল্টা মুভি বানানোর কথাও বলে। বাইরের বিশ্বে ইরানি মুভির জনপ্রিয়তাও কম নয়, সেই ক্ষেত্রে ইরানিরা হয়তো ভাল জবাব দিতে পারে যদিও তা হলিউডের সমকক্ষ নয়, কিন্তু আমাদের ঢালিউড কি পারে বলিউডের সাথে ? আমাদের ঢালিউডের এমন বেহাল দশা যে তারা কলকাতাভিত্তিক টালিউডের সাথেও পারে না !
কেউ আর এটা অস্বীকার করতে পারে না চলচ্চিত্র এখন বিশাল একটা প্রচার মাধ্যম ! নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো সিনেমা শিল্প। দেখা যায় যে দেশটির প্রভাব যত বেশি সেই দেশটির সিনেমা শিল্পও ততবেশি উন্নত। আমাদের ১৬ কোটি জনগণের দেশ আমাদের সিনেমা শিল্প উন্নত হবে না কেন ? তবে ইদানিং কিছু ভাল মানের মুভি হচ্ছে, কিন্তু এরচেয়েও অনেক উন্নত ও ভালমানের মুভি বাননানো সম্ভব। কিন্তু প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ।আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচার, সাহিত্য কি বিশ্বের কোনো দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম ? আমাদের সিনেমা শিল্পের উন্নতি ও বিশ্বমানের মুভি বানানো এর একটা মোক্ষম জবাব হতে পারে!